চিয়া সিড কি?
যদিও চিয়া সিড বাংলাদেশে অনেকের কাছেই এখন পরিচিত, তবে চিয়া সিড কি, এর স্বাস্থ্য উপকারিতা এবং কিভাবে তা খেতে হয় সেই বিষয়ে আমরা বেশিরভাগ মানুষই জানি না। এটি সম্পর্কে আমাদের সঠিক জ্ঞান না থাকাতে আমরা নিজেদেরকে চিয়া সিডের অসাধারণ উপকারিতা থেকে বঞ্চিত করছি।
মধ্য আমেরিকা এবং মেক্সিকোর বিভিন্ন অঞ্চলে চিয়া নামে এক ধরনের গাছ জন্মায়। পুদিনা পরিবারের এই ছোট গাছের বীজই সারাবিশ্বে “চিয়া সিড” নামে পরিচিত। চিয়া সিড সাদা, কালো এবং বাদামি রঙের হয় এবং তিলের মতো খুব ছোট। পানিতে ভিজিয়ে রাখলে চিয়া সিড পানি শোষণ করে প্রায় ১২ গুণ পর্যন্ত বড় হতে পারে।
চিয়া সিড এখন একটি সুপারফুড হিসাবে সারাবিশ্বে সমাদৃত। এই সিডে রয়েছে প্রোটিন, ফাইবার, ক্যালসিয়াম, আয়রন, ওমেগা-৩ ফ্যাটি এবং আরো অনেক ধরনের পুষ্টিগুণ যা বেশ কিছু রোগ প্রতিরোধ করতে সক্ষম। আজ আমরা এই আর্টিকেল থেকে চিয়া সিড খাওয়ার নিয়ম, উপকারিতা, অপকারিতা, দাম ও পুষ্টিগুণ সম্পর্কে জানবো।
চিয়া সিড খাওয়ার নিয়ম
চিয়া সিড হল একটি গন্ধ ও স্বাদহীন স্বাস্থ্যকর খাবার। দিনে দুই চা চামচ চিয়া সিড শরীরের কর্মক্ষমতা বাড়ায়। এটি খাওয়ার জন্য রান্না করার প্রয়োজন নেই। চিয়া সিড পানিতে ভিজিয়ে সহজেই খেয়ে নেওয়া যায়। চিয়া সিড খাওয়ার কিছু পদ্ধতি নিম্নরূপ আলোচনা করা হলঃ
- চিয়া সিড দৈনন্দিন খাবারে সাথে যুক্ত করতে পারেনঃ জুস, স্মুথিতে, ইউগার্টে, অটমেল, পুডিং ও অন্যান্য ডেসার্ট আইটেমের সাথে চিয়া সিড খেতে পারেন ।
- পানিতে ভিজিয়ে চিয়া সিড খেতে পারেনঃ ঠাণ্ডা অথবা হাল্কা উষ্ণ পানিতে চিয়া সিড ১৫-২০ মিনিট ভিজিয়ে রাখুন। রাতে ঘুমানোর আগে কিংবা সকালে খালি পেটে চিয়া সিডসহ পানীয়টি পান করুন।
- চিয়া সিডের সালাদঃ টক দই, চিয়া সিড ও শসা দিয়ে সালাদ তৈরি করে নাস্তা অথবা যেকোনো খাবারের সাথে সালাদ টি খাওয়া যায়।
- দুধের সাথে চিয়া সিডঃ বাংলাদেশ কমবেশি সকলেই গাভীর দুধ পান করেন। দুধ খাওয়ার পূর্বে ২ টেবিল চামচ চিয়া সিড দুধের সাথে মিশিয়ে নিন এবং কিছুক্ষণ ভিজিয়ে রাখুন। তারপর চিয়া সিড সহ দুধ পান করুন।
- ফলের রসের সাথেঃ ডাবের পানি বা বিভিন্ন ফল (যেমন- কমলা, মাল্টা ইত্যাদি) এর রসের সাথে চিয়া সিড ভিজিয়ে খেতে পারেন। এটি খুবই সুস্বাদু পানীয়।
উপরোক্ত পদ্ধতি গুলো ছাড়াও আপনি আপনার ব্যক্তিগত রেসিপিতে চিয়া সিড ব্যাবহার করে খেতে পারেন। চিয়া সিড প্রচুর পরিমাণ পানি শোষণ করে নেয়, এতে হজম এ সমস্যা হতে পারে তাই স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞগণ চিয়া সিড খেলে প্রচুর পরিমাণ পানি খাওয়ার পরামর্শ দেন।
চিয়া সিড এর উপকারিতা
চিয়া সিডের অনেক স্বাস্থ্যগত উপকারিতা রয়েছে। চিয়া সিড একটি অত্যন্ত পুষ্টিকর খাবার যা অনে রোগ প্রতিরোধে সহায়তা করে এবং ওজন কমাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। চিয়া সিডের কিছু উপকারিতা নিম্নে আলোচনা করা হলোঃ
- হৃদপিণ্ডের স্বাস্থ্য ভালো রাখেঃ চিয়া সিডে রয়েছে অমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড ধারণ করে যা ট্রাইগ্লিসেরাইডের এবং রক্তের কোলেস্টেরলের মাত্রা মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে।
- ওজন কমাতে সাহায্য করেঃ চিয়া সিডে আছে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার যা হজম নিয়ন্ত্রণ করে এবং ওজন কমাতে সহায়তা করে।
- রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়ঃ চিয়া সিডে উচ্চ মাত্রায় অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট থাকে যা মেটাবলিক সিস্টেমকে ভালো রাখে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে আরও বৃদ্ধি করে।
- হাঁড়ের মজবুত করেঃ চিয়া সিডে প্রচুর ক্যালসিয়াম রয়েছে যা সুস্থ ও মজবুত হাড় গঠনে অপরিহার্য। এছাড়াও চিয়া সিডে ম্যাগনেসিয়াম ও ফসফরাস বিদ্যমান যা হাঁড়ের সুরক্ষা করে।
- ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করেঃ চিয়া সিড রক্তের সুগারের আধিক্য কমায় এবং ইনসুলিনের সম্প্রসারণশীলতা বৃদ্ধি করতে পারে, যা তাদের ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে।
- চুলের সুরক্ষা নিশ্চিত করেঃ স্বাস্থ্যউজ্জ্বল চুলের জন্যে চাই প্রয়োজনীয় প্রোটিন আর চিয়া সিড হল প্রোটিনের একটি বিশাল উৎস। এতে বিদ্যমান ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড চুল পরা রুধে সাহায্য করে।
চিয়া সিডের পুষ্টিগুণ
চিয়া সিড বিভিন্ন ধরনের পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ একটি শস্য। এখানে এক আউন্স (28 গ্রাম) চিয়া সিডের পুষ্টি সংক্রান্ত তথ্যগুলি দেওয়া হলঃ
- ক্যালোরি: ১৩৭
- প্রোটিন: ৪ গ্রাম
- ফ্যাট: ৯ গ্রাম (যা ৫ গ্রাম ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড)
- কার্বোহাইড্রেট: ১২ গ্রাম (যা ১১ গ্রাম ফাইবার)
- ক্যালসিয়াম: প্রতিদিন প্রদর্শিত পরিমাণের (RDI) ১৮%
- ম্যাগনেসিয়াম: RDI-র ৩০%
- ফসফরাস: RDI-র ২৭%
- পটাশ: RDI-র ৯%
চিয়া সিড ভিটামিন B1, B2 এবং B3 এর একটি ভাল উৎস এবং এছাড়াও জিঙ্ক, কপার এবং ম্যাঙ্গানিজ চিয়া সিডে বিদ্যমান রয়েছে। এটি সোডিয়ামে কম এবং কোলেস্টেরও নেই।
চিয়া সিড এর দাম কত
চিয়া সিডের মান এবং উৎপত্তিস্থল অনুযায়ী দাম ভিন্ন হতে পারে। বাংলাদেশে প্রতি কেজি চিয়া সিডের মূল্য ৭০০ থেকে ১০০০ টাকা। কোন কোন দোকান বা অনলাইন শপ-এ এটির মূল্য আরও বেশি। তবে চিয়া সিড ক্রয় করার ক্ষেত্রে সবসময় এটির মানের দিকে মনোযোগ দেওয়া উচিত।
লক্ষ রাখবেন যেন চিয়া সিড গুলো পরিষ্কার ও ধুলাবালি মুক্ত হয়। উন্নত মানের চিয়া সিড আকারেও একটু বড় হয় এবং এতে কোন মরা বীজ থাকে না। তাই চিয়া সিড কেনার ক্ষেত্রে কম দামে না খুঁজে সঠিক দামে ভালো মানের সিড কেনার চেষ্টা করবেন।
চিয়া সিড এখনো সব মার্কেটে খুব বেশি পাওয়া যায় না তবে ভালো সুপারশপ এবং অনলাইন ষ্টোর গুলো থেকে চিয়া সিড অর্ডার করতে পারবেন।